বইপরিচিতি
৩৭ বছরের ব্যবধানে ১৯৭১ এবং ২০০৮-এর স্মৃতিচারণে রচিত ‘জীবনের জয়রথ’। এ বইয়ে যেমন ইতিহাসের উপকরণ আছে তেমনি উপন্যাসেরও স্বাদ আছে। বইটি জীবনের বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় আবার উপন্যাসও নয়। এই দুটোর সমন্বয়ে লেখক একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করেছেন যাকে স্মৃতিচারণভিত্তিক উপন্যাস বলা যায়।
তথ্যের দিক দিয়ে এই বইয়ে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের কয়েকটি মাইলফলকের সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরণা ও দীক্ষার সম্মোহনী শক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে একজন আমলা কিভাবে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হলেন তার ধারা বর্ণনা রয়েছে।
১৯৭১ সালে শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা প্রবাহের একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাভিত্তিক উপাখ্যান এতে রয়েছে যার ফলশ্রুতিতে ১৭ই এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগরে শপথ গ্রহণ করে। লেখক এই ঐতিহাসিক নাটকীয় ঘটনার একজন সংঘটক ও সাক্ষী হিসেবে তার স্মৃতিচারণ করেছেন। তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী তার আলোচনার পরিধি আরও ব্যাপক করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর রাজনীতি, জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা এবং পরবর্তীতে ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্রের একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ দিয়েছেন। এই বইটিতে প্রাচীনকালের কথপোকথনের আদলে ঘটনাগুলোকে উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের অস্থিরতা ও বৈশ্বিক রাজনীতির প্রভাবে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুন আঙ্গিকে আত্মপ্রকাশ করে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করলে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কারাবরণের দুঃসহ প্রতীক্ষা, বন্দিজীবনের হতাশা ও অতীত গৌরবের স্মৃতির মধ্যে টানাপোড়নকে তিনি অনবদ্যভাবে তার লেখনিতে উপস্থাপন করেছেন।
বন্দি থাকা অবস্থায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক কাঠগড়ায় বসার বিরল সৌভাগ্য তার হয়েছিল। শেখ হাসিনার অদম্য সাহস ও জনমানুষের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার চিত্র বইটিতে ফুটে উঠেছে। সেই সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের টুকিটাকি। একইসঙ্গে লেখক অন্যান্য কারাবন্দিদের সুখ-দুঃখ, বেদনার সঙ্গী হয়ে গিয়েছিলেন। আশা-নিরাশার মধ্যে তিনি জীবন, প্রকৃতি ও পৃথিবীকে অনন্য ভালোবাসা আর মমতায় বরণ করেছেন। তাইতো ‘জীবনের জয়রথ’…
লেখক পরিচিতি
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ব্রিটিশ ভারতে জন্মগ্রহণ করেন এবং বড় হন পূর্ব পাকিস্তানে। ঢাকা এবং লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তার চাকরি জীবনের শুরু। ১৯৬৮ সালে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি)-এ যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় প্রতিরক্ষা বাহিনীতে তিনি কমিশন প্রাপ্ত হন এবং সেক্টর-৮-এর সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতার জন্য তিনি বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত হন।
১৭ই এপ্রিল ১৯৭১ সালে মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সনদ পাঠ এবং সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি অন্যতম প্রধান আয়োজক এবং সংগঠক ছিলেন।
বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০০২ সালে তিনি অবসরে যান। ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান। এখনও সেই দায়িত্বে রয়েছেন।
Reviews
There are no reviews yet.