বই পরিচিতি
কমিউনিস্ট বিপ্লবের মৌলিক পূর্ব শর্তই হলো পুরনো রাষ্ট্রটিকে সম্পূর্ণ ভেঙে এক নতুন রাষ্ট্র গড়ে তোলা। পুরনো রাষ্ট্র যত সম্পূর্ণভাবে ও গভীরভাবে ধ্বংস করা যাবে, নতুন রাষ্ট্রটি গড়ে তোলার কাজ ততোই পূর্ণতা পাবে, তার গড়ে তোলার সম্ভাবনা ততোই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এর মূল কারণ হলো পুরনো ও নতুন রাষ্ট্রের একেবারে স্বতন্ত্র মৌলিক নীতি ও ভিত্তি। সবচেয়ে গণতান্ত্রিক উচ্চতর রূপে বিকশিত বুর্জোয়া প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রও মূল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সংখ্যালঘু শোষকশ্রেণীর শাসনে ও কর্তৃত্বে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী শ্রেণীর ওপর বলপ্রয়োগের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে থাকে। আর অন্যদিকে বিপ্লব পরবর্তী নতুন রাষ্ট্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষের শাসনে সংখ্যালঘিষ্ঠ পরজীবী সাবেক শোষকশ্রেণীর ওপর বলপ্রয়োগের ওপর ভিত্তিশীল। এই দুই ধরনের রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ বিপরীত বৈশিষ্ট্যের কারণে পুরনো রাষ্ট্রকে অক্ষত রেখে বা তার কিছু কিছু সংস্কার সাধন করে তাকে নতুন রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করা একেবারেই অসম্ভব।
আধুনিক বুর্জোয়া রাষ্ট্র তার বিশাল স্থায়ী সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং সমাজের প্রতিটি কোণে বিস্তৃত তার বিভিন্ন সংস্থার বিশালায়তনের আমলাবাহিনী নিয়েই তার শাসনকে টিকিয়ে রাখে। সব ধরনের প্রচার মাধ্যম রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকে, ফলে রাষ্ট্রযন্ত্র যতসব সূক্ষ্ম কলা-কৌশল কাজে লাগানোর উপায়গুলোও ব্যবহার করতে পারে, আর এভাবেই খুবই যোগ্যতার সঙ্গে সে জনগণের সম্মতি আদায় করে নিতে পারে, ক্ষমতায় নির্বিঘ্নে টিকে থাকতে পারে। সুতরাং জালের মতো বহুবিস্তৃত এই ব্যবস্থাকে অটুট রেখে নতুন রাষ্ট্র কোনোভাবেই গড়ে তোলার কথা চিন্তাই করা যায় না। তাই কমিউনিস্ট বিপ্লব মানেই হলো পুরনো রাষ্ট্রটি কীভাবে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভেঙে ফেলা যাবে সেই রণনীতি ও রণকৌশল নির্ধারণ করা। এর যেমন সুদীর্ঘ এক প্রস্তুতির পর্যায় রয়েছে, তেমনই এর রয়েছে একটা চূড়ান্ত বিজয়লাভের পর্ব।
Reviews
There are no reviews yet.